রাজশাহীতে একমাসে মৃত ৩০০ ও জীবিত ২৫০ সাপ উদ্ধার

সময়: সোমবার, জুলাই ২৮, ২০২৫ ৯:২৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

জেলা প্রতিনিধি:

লোকালয়ে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে বিষধর ও নির্বিষ সাপ। রাজশাহী জেলায় চলতি মাসে ৩০০টির বেশি সাপ মেরে ফেলা হয়েছে। এসময় সুস্থ ও আহত এমন ২৫০টি সাপ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস।

তিনি বলেন, মৃত সাপগুলোর মধ্যে রয়েছে গোখরা ও দাড়াশ সাপ। এই সাপগুলোর বাচ্চা ও মা সাপ মারা পড়েছে। যদিও সব সাপ মানুষের ক্ষতি করে না। অনেক সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি পদ্মা নদীর চর এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি। তবে শহর এলাকায় কম। চর বা গ্রাম এলাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বেশি গোখরা সাপ পাওয়া গেছে। বিগত বছরগুলোতে রাসেল ভাইপার নিয়ে একটা আতঙ্ক ছিল। এবছর রাসেল ভাইপার সাপের তেমন উপদ্রব নেই। সাপ ধরা পড়ছে তবে তুলনায় কম।

রেসকিউ টিম একমাসে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০টি রাসেল ভাইপার সাপ ধরেছে। বেশিরভাগই আহত। সবচেয়ে বেশি গোখরা সাপ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সাপের উপদ্রব। এই উপজেলা থেকে সাপের রেসকিউ কল বেশি পাওয়া গেছে। তারপরে চারঘাট ও বাঘা উপজেলা থেকে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে রয়েছে পবা ও বাগমারা উপজেলা। এই দুই উপজেলা থেকে রেসকিউ কল কম পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া সাপের মধ্যে রয়েছে দারাস, গোখরা সাপের মা ও বাচ্চা।

চলতি মাসের ২ জুলাই তানোর উপজেলায় সাপের কামড়ে ইসমাইল হোসেন (৩৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। নিহত ইসমাইল উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের মৃত আলমের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল সকালে নিজের কৃষি জমিতে কাজ করতে যান। কাজ শেষে দুপুরে বাড়িতে ফিরছিলেন। ফেরার পথে ঘাসের ভেতর থেকে বের হয়ে ইসমাইলকে কামড় দেয় সাপ। এরপরে তিনি দ্রুত বাড়ি গিয়ে পারিবারের সদস্যদের জানান। স্বজনরা তাকে প্রথমে তানোর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে থেকে তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

নিহতের বড় ভাই মাইনুল ইসলাম বলেন, সকালে জমিতে কাজে গিয়েছিল। দুপুরে বাড়িতে ফেলার সময় তাকে সাপে কামড় দেয়। আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে মৃত্যু হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, রোগীতে মৃত অবস্থায় স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। নিহতের স্বজনদের দাবি মৃত ইসমাইলকে রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দিয়েছে। তবে তারা সাপের ছবি দেখাতে পারেনি।

পদ্মার চারের বাসিন্দা আজিম বলেন, নদীর পানি বাড়ার পর থেকে সাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। নদী থেকে অনেক সময় বাড়িতে উঠে আসছে। সন্ধ্যার পরে এক ধরনের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। পাশের চরে কয়েকটা সাপ জালে ধরা পড়েছে। সে সাপগুলো রাতে জালে পড়েছে।

স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম বিনামূল্যে প্রয়োগের ব্যবস্থা রাখা উচিত। যারা সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় তারা বেশিরভাগই গরিব শ্রেণির। তারা খাল-বিলে কাজে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেক পরিবারের অল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচের ব্যবস্থা থাকে না। তাই অ্যান্টিভেনাম বিনামূল্যে রোগীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষ জানে না কোন সাপের বিষ আছে, আর কোন সাপের বিষ নেই। সাপের কামড়ে মৃত্যুর কথা ভেবে মানুষ নির্বিষ সাপও পিটিয়ে মেরে ফেলে। সাপ কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখে। পরিবেশে সরসরি ক্ষতি করে এমন অনেক প্রাণী সাপ খেয়ে নেয় আমাদের অজান্তে। সাপ মানুষের জন্য উপকারী প্রাণী। তবে না জানা ও সাপ নিয়ে ভীতির কারণে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলে। এই জায়গায় মানুষকে সচেতন হতে হবে।

রাজশাহী বন্যপ্রাণি বাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মানুষকে চলাফেরায় সতর্ক হতে হবে। সাপ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে। সাপ পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে। সাপ কৃষকের বন্ধু। সাপ ফসল রক্ষায় সহায়ক। মানুষের ধারণা সবসাপের বিষ রয়েছে। মানুষ এখনও জানে না দেশে ১০৩ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ প্রজাতিই নির্বিষ। মাত্র ২৫ প্রজাতি সাপের বিষ রয়েছে। তবে এলাকা ও অঞ্চল ভেদে সব জায়গায় এসব সাপ দেখতে পাওয়া যায় না।

Print This Post