বিশেষ প্রতিবেদক:
পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাটফর্মে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের গত ২৯ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধি-বিধান অনুযায়ী করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসএমই প্লাটফর্মে গত দুই বছর আগে কোম্পানিটির লেনদেন চালু হলেও এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে আরো নয়টিটি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রমে নতুন নির্দেশনার বিষয়টি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ওই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
গত ২৯ মে, ২০২৫ তারিখে চিঠির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির কার্যক্রম পরিদর্শন পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এ বিষয়ে, পূর্ববর্তী নির্দেশনার সঙ্গে কোম্পানিটির পরিদর্শন কার্যক্রমে আরো ৯টি শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলো। অতএব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এর অধীনে কমিশনের পরিদর্শন, তদন্ত এবং তদন্ত বিভাগে একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এছাড়া আরো একটি চিঠিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে বিএসইসি জানিয়েছে, অ্যাগ্রো অর্গানিকার পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরও ৩০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা ১৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধান অনুসারে হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা।
কিউআইইউ এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের সম্মতিপত্রে প্রকাশিত অনুসারে ব্যবহার করে সময়ে সময়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি-না তা আর্থিক প্রতিবেদনে যাচাই করা।
অল্প পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যয় ব্যতীত সমস্ত লেনদেন ব্যাংক হয়েছিল কি-না ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ যাচাই করা।
সেই সঙ্গে কমিশনের সম্মতিপত্রের শর্ত নং- ২৬ অনুসারে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য এবং সময় সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি নিয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করা।
কোম্পানিটি এসএমই প্লাটফর্মে ৩ বছর আগে লেনদেন চালু করেছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি- এর কারণ খতিয়ে দেখা।
এই বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকলে তা যাচাই করা।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কি-না সে তথ্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে নেই। একই সঙ্গে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্যর (এনএভিপিএস) তথ্যও পাওয়া যায়নি।
অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসিকে ২০২৩ সালের ৩১ মে পুঁজিবাজার থেকে কিউআইও এর মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটির প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৬.৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫০.৫৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।