আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের এগারো মাস পেরিয়ে গেলেও দেশে ফেরেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার ফেরা নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও তা আলোচনাতেই থমকে গেছে।
বারবার গুঞ্জন উঠেছে; তারিখ ভেসে বেড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে, কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারাও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তার দেশে ফেরার তারিখ।
এদিকে বুধবার (৯ জুলাই) রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার এ নির্দেশনা দেশের রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের ঘটনা। এর ফলে নির্বাচন বিলম্ব হওয়ার সব ধরনের গুঞ্জনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। শিগগিরই কমিশনের তৎপরতা দৃশ্যমান হবে বলেই মনে হচ্ছে। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এর আগে সর্বশেষ ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন করে জোরালো হয় বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তনের আলোচনা। ধারণা করা হয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্যই তিনি অপেক্ষা করছেন।
এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে তার নিরাপত্তা, বাসস্থান এবং রাজনৈতিক কার্যালয় সংক্রান্ত নানা প্রস্তুতির কথা জানা গেলেও বাস্তবে এখনো তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও ২ জুলাই পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই তিনি দেশে ফিরছেন। এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গত ১০ জুন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছিলেন, ‘তিনি শিগগিরই ফিরছেন। ’
একই কথা বলেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও। ২০ জুন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘উনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেকোনো সময় একটি দিনক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে চলে আসবেন। ’ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও বলছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘শিগগিরই ফিরবেন’, কিন্তু সেই ‘শিগগিরই’টা ঠিক কবে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অনিশ্চিত। দেশে তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে যতটুকু গোপনীয়তা রয়েছে, ততটাই জোরালো প্রস্তুতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বিএনপির অন্দরমহলে।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেছিলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের ঠিক পরদিনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, সেদিন যদি তিনি ফিরতেন, তাহলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত হতো। যদিও ইতোমধ্যেই দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক মুহূর্তে পরিণত করার সমস্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, বিমানবন্দরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানজুড়ে বিশাল জনসমাগমের মাধ্যমে তাকে বরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশ্ন একটাই- সেটা কবে?
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই আবার মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের কাতারে ফেলার একটা ষড়যন্ত্রও হচ্ছে ৫ আগস্টের পর থেকে। এর অংশ হিসেবে নানা সময় বিএনপিকে ঘিরে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যও দেখতে পাওয়া গেছে। এ কারণেই তারেক রহমানের দ্রুত দেশে ফেরাটা জরুরি বলেও মনে করছেন তারা। ৮ জুলাই মেহেরপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি বক্তব্যকে ঘিরেও এমন আভাস পাওয়া যায়। এদিন পদযাত্রায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘জনগণ যদি পাশে থাকে তাহলে দিল্লিতে পালাতে হয় না, লন্ডন থাকতে হয় না। ’
হাসনাত আবদুল্লাহর এই বক্তব্যকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তারেক রহমানকে এক কাতারে ফেলার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান লন্ডনে গেছেন, সেটা দেশবাসী খুব ভালো করেই জানে। শেখ হাসিনার দিল্লি পালানোর সঙ্গে তারেক রহমানের লন্ডনে বসবাসকে মেলানো শিশুসুলভ কথাবার্তা। আন্দোলনে বিএনপির কতটুকু ভূমিকা ছিল, ওই বক্তব্য যিনি দিয়েছেন, তারও কম জানার কথা না। ’ এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যে বিএনপির ক্ষতি হওয়ার বদলে তাদেরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই নেতা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিগগিরই বীরের বেশে দেশে ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে দলীয় এক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি ঘোষিত ৩৬ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলতি বছর ৬ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় একটি বিজয় মিছিল আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বিজয় মিছিলে সশরীরে অংশ নেবেন দলের বর্তমান কান্ডারি তারেক রহমান। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা মেলেনি।