ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি

সময়: রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫ ১০:৪৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

জেলা প্রতিনিধি

টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

শনিবার (১২ জুলাই) বাঁধ ভাঙনের চার দিন পর এমন তথ্য জানায় পাউবো। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযথ তদারকি ও দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

৮ জুলাই (মঙ্গলবার) থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পরে পানি ছড়িয়ে পড়ে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার কিছু অংশে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নতুন দুর্ভোগ।

পাউবো জানায়, পরশুরামে ১৯টি এবং ফুলগাজীতে ১৭টিসহ মোট ৩৬টি ভাঙনের হিসাব মিলেছে। এর আগে মাত্র ২০টি ভাঙনের কথা জানানো হয়েছিল। কর্মকর্তাদের দাবি, সরেজমিন পরিদর্শনের পরই প্রকৃত চিত্র পাওয়া গেছে।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গেল বছরের বন্যায়ও একই নদীগুলোর শতাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন ২০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বাঁধ মেরামত করা হলেও বছর না যেতেই আবারও সেগুলো ভেঙে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্লাবনে ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ বিপদে পড়েন। ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, কৃষিতে ৫ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ফুলগাজীর কমুয়া গ্রামের খামারি মোস্তাক আহমেদ বলেন, গতবছরের মতো এবারও তার খামার ও মাছের ঘেরে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ছাগলনাইয়ার শিউলি আক্তার অভিযোগ করেন, পূর্বাভাস না পেয়ে প্রস্তুতির সুযোগ পাননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু বৃষ্টি আর উজানের ঢলকে দায় দিয়ে দায়সারা করে।

পরশুরামের বাসিন্দা মাসুম বলেন, “বাঁধ ভাঙনের চারদিনেও কোনো পাউবো কর্মকর্তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। এবার আমরা টেকসই বাঁধের দাবিতে আন্দোলনে নামব।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, পানি কমে গেলে ভাঙন মেরামতের কাজ শুরু হবে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীসহ প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গেল বছরের জুলাই-আগস্টের বন্যায় প্রাণহানি হয় ২৯ জনের। সেবারও ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছিল শত কোটি টাকা। এবারের দুর্যোগে সেই আশঙ্কাই আবারও সামনে এসেছে।

কালাম/সুমন

Print This Post