নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবনে শিক্ষা উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। সেই ভবনের গেটে থাকা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় অন্তত তিনজন আহত হন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর সোয়া ২টার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংঘর্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ পুরো প্রেস উইং সেখানে অবরুদ্ধ থাকে প্রায় ৫ ঘণ্টা। পরে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তাদের বের করে আনা হয়।
মাইলস্টোর ক্যাম্পাসে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ দিন সকালে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের স্থান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার, প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং তাদের সহযোগীরা।
ছয়টি দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন উপদেষ্টারা। একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথাও হয় তাদের। এরপর বিবৃতি দিয়ে সরকার জানায়, শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবিই যৌক্তিক।
আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, “মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পূনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের বলেন, “আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি—
১. নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সোমবার দুপুরে মাইলস্টোনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। অনেকের অবস্থা অশঙ্কাজনক।