ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনার অভিযোগে ৬ ভারতীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

সময়: বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩১, ২০২৫ ১:০৩:৩৩ অপরাহ্ণ

ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনার অভিযোগে ৬ ভারতীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এক ঘোষণায় জানিয়েছে, এ ধরনের লেনদেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশ ‘১৩৮৪৬’-এর আওতায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে।

বুধবার প্রকাশিত ওই ঘোষণায় জানানো হয়, ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ ভারতীয় কোম্পানিসহ বিশ্বের মোট ২০টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ বৃহত্তর একটি কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য ইরানের রাজস্ব আয়ের উৎস বন্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব আয় সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিসহ ইরানি জনগণকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরানি শাসকগোষ্ঠী এখনো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত উসকে দিচ্ছে এবং তাদের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করছে। আজকের পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এমন অর্থপ্রবাহ বন্ধ করতে চায়, যা ইরানি সরকার বিদেশে সন্ত্রাসে সহায়তা এবং নিজ দেশের জনগণকে দমনে ব্যবহার করছে।’

নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ভারতের আলকেমিক্যাল সল্যুশনস প্রাইভেট লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইরানি উৎসের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি ও ক্রয় করেছে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে।

গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড-এর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে তারা মিথানলসহ বিভিন্ন ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে।

ভারতের পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড একই সময়ে টলুইনসহ অন্যান্য ইরানি পণ্য আমদানি করেছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে, এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

রামনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ইরানি উৎসের মিথানল ও টলুইন আমদানি করেছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পারসিস্টেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড-এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তারা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে। এসবের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাব আল বরশা-এর সরবরাহকৃত পণ্যও ছিল।

অন্যদিকে, কাঞ্চন পলিমারস ১৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যে ইরানি উৎসের পলিথিন আমদানি করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা তানাইস ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করেছে।

এই ছয়টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার ১৩৮৪৬’-এর ‘সেকশন ৩(এ)(৩)’ এর আওতায় নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ‘ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ক্রয়, বিক্রয় বা পরিবহনের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে জড়িয়েছে’।

নিষেধাজ্ঞার পরিণতি

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে বা কোনোভাবে মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় সম্পদ ও সম্পদের স্বার্থ জব্দ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এখন থেকে এসব নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না, যদি না অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওফ্যাক) থেকে বিশেষ অনুমোদন নেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে যেকোনো ধরনের অর্থ, পণ্য বা সেবা প্রদান—যা কোনোভাবে এই নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য, তাদের কাছে বা তাদের পক্ষ থেকে আসে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য কেবল শাস্তি নয়, বরং আচরণে পরিবর্তন আনা’নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো শাস্তি দেওয়া নয়, বরং ইতিবাচক আচরণগত পরিবর্তন আনা,’ এমনটাই বলা হয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয়, ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন নতুন করে তৎপর হয়েছে।

Print This Post
নিউজটি ৯৮ বার পড়া হয়েছে ।