অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরি: প্রধান উপদেষ্টা

সময়: বুধবার, আগস্ট ২০, ২০২৫ ১২:৩০:৫৭ অপরাহ্ণ

বিশেষ প্রতিবেদক:

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা উন্নত হওয়া জরুরি, আর এ জন্য কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তার উপস্থিতিতে অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু নিয়ে আমরা আজ একত্রিত হয়েছি। জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ থাকা অত্যাবশ্যক। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য সুস্থ ও সক্রিয় প্রজন্ম তৈরি করা আমাদের মূল লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা—সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। কেবল পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সুস্থ প্রজন্ম নিশ্চিত করা যাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা উদ্বোধনী বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অসংক্রামক রোগ দিনদিন বাড়ছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং বিপুল জনসংখ্যার কারণে এই সমস্যা আরও জটিল। এটি কেবল স্বাস্থ্য খাতের নয়, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুর ৭১ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক রোগের কারণে, যার মধ্যে ৫১ শতাংশ মানুষ ৭০ বছরের নিচে মারা যায়।”

তিনি বলেন, “অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হন। যেমন, ক্যান্সারের ক্ষেত্রে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সর্বাধিক চেষ্টা করতে হয় এবং অনেক সময় বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়। তাই রোগ প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের ঝুঁকি কমানো জরুরি।”

তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পুষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত ওজন এবং ধূমপানের মতো সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। চিনির অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং শিশু, কিশোর ও নারী স্বাস্থ্যকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনসচেতনতা কার্যক্রমে যুবশক্তি ও নাগরিক সমাজকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি-কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কারিগরি সহযোগিতা জরুরি। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল প্রয়োগ করলে উদ্যোগ গ্রহণ সহজ হবে। স্বাক্ষরকারী মন্ত্রণালয়গুলো সহযোগিতা করবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেবে।”

তিনি আরো বলেন, “যে কোনো কর্মপরিকল্পনা সফল করতে নিবিড় মনিটরিং ও মূল্যায়ন অপরিহার্য। এজন্য যথোপযুক্ত জনবল এবং আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে কোনো সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ থাকা চলবে না।”

Print This Post