যেসব দোয়া রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়

ডেস্ক রিপোর্ট:

সময়: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫ ৮:০৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মানুষের জীবন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পূর্ণ। এসব পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম হলো রোগব্যাধি। কখনও ছোট অসুস্থতা, আবার কখনও দীর্ঘমেয়াদি কষ্টকর রোগ। এ অবস্থায় মানুষ ভরসা খোঁজে—চিকিৎসা, ওষুধ, পরামর্শ, আর সবচেয়ে বড় আশ্রয় হলো মহান আল্লাহর কাছে দোয়া। ইসলামের শিক্ষা হলো—রোগ এলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, আবার একই সঙ্গে আল্লাহর দরবারে রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করতে হবে।

কোরআনের আলোকে রোগ ও আরোগ্য
কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি যখন অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে সুস্থ করেন।” (সুরা শু’আরা, আয়াত: ৮০)

আল্লাহ বলেন, “আর আমি কোরআনে এমন কিছু নাজিল করেছি যা মু’মিনদের জন্য শিফা ও রহমত।” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৮২)

অর্থাৎ, প্রকৃত শিফা (আরোগ্য) কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। চিকিৎসা হলো বাহ্যিক মাধ্যম, কিন্তু নিরাময় দানকারী হলেন আল্লাহ।

হাদিসে রোগমুক্তির দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হলে কিংবা অন্যকে অসুস্থ দেখলে কিছু দোয়া পড়তেন। তিনি বলতেন, “তোমরা রোগীদের কাছে গেলে বলো: ‘লা বাআসা তহূরুন ইনশাআল্লাহ।’” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৫৬)

অর্থাৎ, “কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহ চাইলে এ রোগ তোমার গুনাহ মাফের কারণ হবে।”

এছাড়াও তিনি রোগীদের জন্য আল্লাহর কাছে শিফা চাইতেন এবং আমাদেরও তা শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আরো কয়েকটি দোয়া এমন:

১. সাধারণ রোগমুক্তির দোয়া

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বান-নাস, আঝহিবিল বা’স, ইশফি, আনতাশ শাফি, লা শিফা’আ ইল্লা শিফা’উক, শিফা’আন লা ইউঘাদিরু সাকামা।

অর্থ: হে মানুষের রব আল্লাহ, রোগ দূর করে দিন। আরোগ্য দান করুন। আপনি-ই প্রকৃত আরোগ্য দানকারী। আপনার শিফা ছাড়া অন্য কোনো শিফা নেই। এমন শিফা দান করুন, যা কোনো রোগ অবশিষ্ট রাখবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯১)

২. রোগীর কাছে গিয়ে পড়ার দোয়া

উচ্চারণ: আসআলুল্লাহাল আযিম, রব্বাল আরশিল আযিম, আইয়াশফিয়াকা। (৭ বার পড়তে হবে)

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি—মহান আরশের রব তোমাকে আরোগ্য দান করুন। (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২০৮৩)

৩. রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়ার দোয়া

উচ্চারণ: লা বাআসা, তহূরুন ইনশাআল্লাহ।

অর্থ: কোনো ক্ষতি নেই। আল্লাহ চাইলে এটি তোমার গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধির কারণ হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৫৬)

৪. কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তির দোয়া

উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহি ওয়াক্বুদরাতিহি মিন শার্রি মা আজি দু ওয়া উহাযিরু।

অর্থ: যা অনুভব করছি ও আশঙ্কা করছি, তার অনিষ্ট থেকে আমি আল্লাহ ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৭)

৫. দোয়া ইউনুস, সংকটকালে বিশেষ দোয়া

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।

অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি গুনাহগারদের একজন। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭; সহিহ তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

এই দোয়া রোগ-ব্যাধি ও বিপদের সময়ে পড়লে আল্লাহর রহমত দ্রুত নাজিল হয়।

দোয়ার তাৎপর্য
১. আত্মিক প্রশান্তি: রোগের কষ্টে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। দোয়া মনকে শান্ত করে, আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল করে তোলে।

২. আশাবাদী মানসিকতা: দোয়া পড়লে মনে আশা জাগে, হতাশা দূর হয়। রোগীর দ্রুত আরোগ্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৩. গুনাহ মাফের সুযোগ: ইসলামে বলা হয়েছে, রোগ মুসলিমের গুনাহ মাফের কারণ হয়। দোয়া সেই প্রক্রিয়াকে আরও বরকতময় করে।

৪. চিকিৎসার পরিপূরক: চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি, কিন্তু দোয়া চিকিৎসার শক্তিকে দ্বিগুণ করে তোলে।

রোগ মানুষের জীবনের বাস্তবতা। তবে ইসলাম রোগকে শুধু কষ্ট নয়, বরং আল্লাহর পরীক্ষা ও রহমতের দরজা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তাই মুসলিমের কর্তব্য হলো রোগ এলে ধৈর্য ধারণ করা, চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দোয়া করা। মহানবী (সা.) যেসব দোয়া আমাদের শিখিয়েছেন, সেগুলো নিয়মিত পড়লে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবং শারীরিক-আত্মিক সুস্থতা লাভ হয়।

Print This Post
নিউজটি ১১৪ বার পড়া হয়েছে ।