নেপালে সহিংস বিক্ষোভের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

সময়: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫ ১২:০৩:৪৩ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অবশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলো নেপাল সরকার। নেপাল মন্ত্রিসভার মুখপাত্র এবং যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী পৃথিবী শুব্বা গুরুং মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সামাজিক ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে সোমবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

নেপালের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সোমবার রাতেই জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর জেনারেশন জেডের দাবির প্রতি সাড়া দিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যমগুলোকে সকালে পৃথিবী শুব্বা গুরুং বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা আমরা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এগুলো এখন চালু রয়েছে।’

গত সপ্তাহে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ও বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন নেপাল সরকার।

নতুন নিয়মনীতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ দেখিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে নেপাল সরকার। তবে নিয়ম মানায় টিকটকসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধের আওতার বাইরে ছিল।

নেপাল সরকার যুক্তি দিয়েছে যে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করছে না বরং তাদের নেপালি আইনের আওতায় আনতে চাইছে।

তবে এর ফলে নেপালের ব্যবসা ও পর্যটন খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় নাগরিকদের।

নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন নেপালের কয়েক হাজার মানুষ। তাদের বেশির ভাগই তরুণ বা জেন–জি প্রজন্মের। সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখারা, ভুটওয়াল, ভাইরাহাওয়া, ভরতপুর, ইতাহারিসহ দেশটির সাতটি শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। একপর্যায়ে গুলিও চালানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয় কাঠমান্ডুতে। সেখানে ১৭ জন নিহত হন।

কিছু বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি’র নিজ শহর দামাকের বাড়িতে পাথরও নিক্ষেপ করে।

এক বিক্ষোভকারী সাবানা বুদাথোকি বিবিসিকে জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার চেয়ে দুর্নীতিই সবার মূল মনোযোগ। আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই। আমরা দুর্নীতি থামাতে এসেছি।’

সম্প্রতি নেপালি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ‘নেপো কিড’ ক্যাম্পেইন ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপনকে তুলে ধরা হচ্ছে এবং অভিযোগ করা হচ্ছে যে, এসব জীবনযাপন দুর্নীতির অর্থায়নে সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি বলেছেন, তিনি সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। সহিংসতার ঘটনাকে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশে’র জন্য দায়ী করেছেন তিনি।

ব্যাপক বিক্ষোভ, সহিংসতা, হতাহতের ঘটনার পর সোমবার সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

Print This Post
নিউজটি ৮৩ বার পড়া হয়েছে ।