বিলুপ্ত প্রানী‘ডোডো’ ফেরাতে উদ্যোগ

ডেস্ক রিপোর্ট:

সময়: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫ ৯:৪৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক পৃথিবীতে মানুষের স্বেচ্ছাচার আর নানা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে প্রাণী বিলুপ্তির প্রসঙ্গ এলেই অবধারিতভাবে যে পাখিটির নাম আসে, তা ডোডো। প্রায় চারশ বছর আগে উড়তে না পারা ধূসর-বাদামি রঙের এই নিরীহ পাখিগুলো দেখা যেত ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপদেশ মরিশাসে। ১৫৯৮ সালে ডাচ বা ওলন্দাজরা মরিশাস দ্বীপটি দখল করার পরই যথেচ্ছ শিকার আর আবাসস্থল হারানোয় পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতো বিলুপ্ত হয়ে যায় ডোডো পাখি। তবে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে আবার এই পাখির প্রজাতিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক বায়োটেকনোলজি সংস্থা কলোসাল বায়োসায়েন্সেস।

কলোসাল বায়োসায়েন্সেস জানিয়েছে, তারা ডোডো পাখির একটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত সংস্করণ তৈরির যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তারা রক ডোভ, যা সাধারণ কবুতর নামে বেশি পরিচিত, এর বিশেষায়িত কোষ কালচার করতে সফল হয়েছেন। একই বা অনুরূপ কৌশল ব্যবহার করে এবার তারা ডোডোর নিকটতম জীবিত আত্মীয় নিকোবার কবুতরের কোষ কালচার করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো একটি জীবন্ত ডোডো ফিরিয়ে আনা, যা দেখতে তার বিলুপ্ত পূর্বসূরির থেকে আলাদা হবে না।

বিজ্ঞানীরা অবশ্য এও জানান, ডোডোকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণে এখনও বহু বছর তাদের কাজ করতে হবে। তবুও নিকোবর কবুতরের কোষ কালচারের এই অগ্রগতি ডোডো ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মানছেন তারা। কলোসালের প্রধান বিজ্ঞানী বেথ শাপিরো বলেন, এটি শুধু ডোডো ফেরানোর প্রকল্পের জন্য নয়, বরং পাখির জাত সংরক্ষণের জন্যও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে পাখিদের ক্ষেত্রে জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রক্রিয়ার সবচেয়ে ধীর অংশ হলো আমাদের দুটি প্রজন্ম তৈরি করতে হয়। আমরা কোষগুলো ক্লোন করতে পারি না, তাই আমাদের আলাদাভাবে তৈরি করতে হয় মা ও বাবা। এরপর এমনভাবে তাদের প্রজনন ঘটাতে হবে, যাতে উভয় জিনের অনুলিপি পরিবর্তিত হয়। এটি বেশ ধীর প্রক্রিয়া।

জানা গেছে, সাধারণ কবুতর নিয়ে গবেষণায় কলোসালের বিজ্ঞানীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরনের কোষ, যাকে ‘প্রাইমরডিয়াল জার্ম সেল’ বলা হয়, সেটি তৈরি করার উপায় খুঁজে বের করেছেন। এই কোষ ডিম ও শুক্রাণু কোষের পূর্বসূরি হিসেবে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা রক ডোভের ওপর মনোযোগ দিয়েছে। কারণ, এই পাখিটির ব্যাপকভাবে প্রজনন করানো হয় এবং এটি ডোডোর দূরবর্তী আত্মীয়। বিজ্ঞানীরা এর আগে মুরগি ও রাজহাঁসের প্রাইমরডিয়াল জার্ম সেল কালচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই কৌশল ব্যবহার করে তারা একটি রাজহাঁসের দ্বারা একটি মুরগির জন্ম দিয়েছিলেন।

এর আগে কলোসাল বায়োসায়েন্সেস গত এপ্রিলে তিনটি ধূসর নেকড়ে শাবককে জেনেটিকভাবে বদলে ১২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডায়ার উলফে পরিণত করে, যা সে সময় গোটা পৃথিবীতে আলোড়ন তৈরি করেছিল। সে সময় কলোসালের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, তারা প্লাইস্টোসিন যুগে পৃথিবীতে বিচরণ করা আধুনিক হাতির পূর্বপুরুষ রোমশ ম্যামথ, থাইলাসাইন– যা তাসমানিয়ান টাইগার নামে বেশি পরিচিত এবং আরেকটি উড়তে অক্ষম বিলুপ্ত পাখি ‘মোয়া’-কে ফিরিয়ে আনতে একই রকম প্রচেষ্টা চলছে। খবর সিএনএনের।

Print This Post
নিউজটি ৫৮ বার পড়া হয়েছে ।