রাজশাহী থেকে ফিরে মো. মাইফুল ইসলাম রনি
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার নওগাঁ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদী। এই নদী পারাপারে চালকবিহীন ছোট নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রায় ১০০ গজ দীর্ঘ এই নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত রশি টানা। সেই রশি ধরে মাঝিবিহীন নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা।
এই বিপজ্জনক পারাপারের কারণে অনেক শিক্ষার্থী নৌকা থেকে পানিতে পড়ে যায়। তবুও নিরুপায় হয়ে সন্তানদের এভাবেই বিদ্যালয়ে পাঠান অভিভাবকেরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্র নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যায়। অন্য সহপাঠীরা দ্রুত তার হাত ধরে ফেলায় তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। অভিভাবকরা জানান, এই ধরনের ঘটনা এখানে নিত্যদিনের।
এদিন সকালে দেখা যায়, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের সহকারী শিক্ষক শিরিন আক্তারের সঙ্গে ডিঙি নৌকায় নদী পার হচ্ছে।
স্কুলছাত্র ফারুক ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, একা একা নৌকায় নদী পার হতে ভয় লাগে। মাঝে গিয়ে স্রোতে নৌকা পূর্বদিকে চলে যায়, তখন রশি টেনে ধরে রাখতে কষ্ট হয়।
শিক্ষার্থী সম্পা খাতুন ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, বৃষ্টির সময় পাড় থেকে নদীতে নামতে গিয়ে পড়ে যাই। অনেকে নৌকা থেকেও পড়ে যায়। বই-খাতা ভিজে যায়।
অভিভাবক নূরেসা বেগম ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, আমাদের সব সময় মনের মধ্যে উৎকণ্ঠা নিয়ে থাকতে হয়। আমাদের চোখের সামনেই গতকাল চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র নদীতে পড়ে গিয়েছিল।
আরেক অভিভাবক শহিদুল ইসলাম ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, স্কুল যেতে এই নদী পারাপারের কারণে অনেকেই অন্য স্কুলে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করেছেন। আমাদের দাবি, এখানে একটা ব্রিজ হলে চার-পাঁচ গ্রামের মানুষের উপকৃত হবে।
নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিন আক্তার ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, আমরা বড় মানুষই নৌকা নিয়ে নদী পার হতে ভয় পাই, ছোটদের কথা তো বলাই বাহুল্য। এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল, সেটি ভেঙে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে এখানে একটি ব্রিজ হলে হাজারো মানুষের ভোগান্তি কমবে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আহমেদ ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, শুধুমাত্র নদী পারাপারের ঝুঁকির কারণে স্কুলের শিক্ষার্থী কমে গেছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে ২০০ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী ছিল, এখন তা কমে ১১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণে তাদের সন্তানদের দূরের স্কুলে ভর্তি করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মুঞ্জিলা সরদার ট্রেডনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, আগে এখানে একটি বাঁশের সাঁকো ছিল, সেটি ভেঙে গেছে। এখন এই ছোট ডিঙি নৌকায় ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করে। এখানে একটি ব্রিজ হলে চার থেকে পাঁচ গ্রামের মানুষের অনেক উপকার হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।