দেশের শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক সিটি ব্যাংক পিএলসির কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার (পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিরুদ্ধে নিজ ব্যাংকের অর্থ ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে তদন্ত করে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন ধরা পড়ার পর চলতি বছরের ৩ জুন বিএসইসি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকল নথি জমা দিলে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান ও তিনজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরও অবৈধ শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছেন।
বিএসইসি তদন্তে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে সিটি ব্যাংকের কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার মো. সানোয়ার খান তার ব্যক্তিগত বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক পিএলসি’র বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের ১০ লাখ ইউনিট শেয়ার প্রতিটি ১৩ টাকা ৮০ পয়সা দরে কিনেছিলেন। সে সময় বাজারদর ছিল ১৫ টাকা ৬০ পয়সা। এভাবে তিনি ব্যাংকের ক্ষতির বিনিময়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকা মুনাফা করেন।
পরবর্তীতে তিনি ওই শেয়ারগুলো বাজারদরে বিক্রি করে লাভ বুঝে নেন। একই কৌশলে তার আরেকটি অ্যাকাউন্ট এবং স্ত্রী মিসেস আসমাউল হুসনার বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও লাভবান হন। তিনি ও তার স্ত্রী এভাবে এডিএনটেল, লাভেলো এবং বিডি পেইন্টসের শেয়ার লেনদেন করেও মুনাফা অর্জন করেন।
এ ধরনের লেনদেনের প্রাথমিক তথ্য ধরা পড়ার পর চলতি বছরের ৩ জুন বিএসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে খানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত, অতিরিক্ত পরিচালক লামিয়া আক্তার ও সারাহ তাসনুভা।
এরপর ৯ জুলাই তদন্ত কমিটি সিটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের কাছে ব্যাংকের বিনিয়োগনীতি ও এ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যাংক কী ব্যবস্থা নেয়- তা সংক্রান্ত নথি চায়।
তদন্ত শেষে বিএসইসি জানায়, সিটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান মোহাম্মদ শাহ আলম, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ.কে.এম. সাইফ উলাহ কোচর এ.সি.এ., মোহাম্মদ মাহমুদ গনি এবং মো. আশানুর রহমানও এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছেন। এ প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের কাছে এসব নতুন অনুসন্ধান বিষয়ে তথ্য চায়।
বিএসইসি মনে করছে, এসব কর্মকর্তারা নিজেদের পদমর্যাদা ও ব্যাংকের অর্থনৈতিক সম্পদের অপব্যবহার করে শেয়ারবাজারে অবৈধ ও অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত হয়েছেন, যা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের শামিল। এ ধরনের কার্যক্রম বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও বাজারের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আইন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

