সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবীবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে কেনাকাটা। দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে এসেছে বাহারি নকশা এবং বিভিন্ন থিমের পূজার শাড়ি। এবার দেবী আসবেন হাতি বা গজে চড়ে। বলা হয়ে থাকে হাতিতে চড়ে দেবী শুভবার্তা নিয়ে আসেন। শুভবার্তাবাহক দেবীকে বরণ তো সেভাবেই করতে হবে! এবারের পূজার প্রতিটি দিন নিজেকে অভিনবভাবে উপস্থাপন করতে শাড়িকেই বেছে নিতে পারেন। সপ্তমী থেকে দশমী–প্রতিটি দিন বিভিন্ন রং ও নানা ধরনের শাড়ি থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়। হোক সেটি তাঁত, সিল্ক, সফট সিল্ক, জর্জেট, গরদ কিংবা মসলিন। লাল-সাদার পাশাপাশি ম্যাজেন্টা, বেগুনি, ঘিয়ে, কমলা, গোলাপি, নীল রঙের শাড়ি নির্বাচন করতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন লুকের জন্য। পরার ধরনেও আনতে পারেন বৈচিত্র্য।
পূজার শুরুর দিন থেকেই ঠাকুর দেখতে যেতে পারেন শাড়ি পরে। বিশ্বরঙ, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, হরীতকী, সাতকাহন, সরলা, লা রিভ, টুয়েলভ ক্লদিং, সারা লাইফস্টাইল, অঞ্জন’সসহ সব ব্র্যান্ডে এবারের পূজার শাড়ি চলে এসেছে। সেসব শাড়িতে রয়েছে বাহারি নকশা ও থিমের রাজত্ব।
বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমরা সৃষ্টিশীল ভাবনায় বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে পোশাকে তুলে ধরেছি। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও চিত্তাকর্ষক থিম যেমন শারদ, ঐতিহ্য, আল্পনা, উৎসব, মধুবনী, সোয়াস্তিকা, পূজামণ্ডপ, যামিনী রায়, বিমূর্ত, কটকি মোটিফ, দেবীর বাহন হাতি এবং শান্তি নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া পদ্মফুল, দেবী দুর্গার প্রতিকৃতি, মন্ত্র, দেবী দুর্গার স্তুতিবাক্য ইত্যাদি রয়েছে শাড়িতে। দেবী দুর্গার মুখ ও অন্যান্য পূজার থিম ছাড়াও পোশাকে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা, আর্ট ইত্যাদি রেখেছি।’
এ বছর বিশ্বরঙে তাঁত, মসলিন, হাফসিল্ক, জর্জেট, সিফন, বলাকা সিল্কের শাড়িগুলো বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানান বিপ্লব সাহা। কিছু কিছু শাড়িতে আলগা নকশিকাঁথার পাড় বসানো হয়েছে। টিস্যু সিল্ক ও হাফসিল্কের শাড়িতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রিন্ট ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। শাড়িতে স্ট্রাইপ, ডট, বল, জ্যামিতিক প্রিন্ট, ফ্লোরাল মোটিভ ইত্যাদি করা হয়েছে।
লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস জানান, পূজা ২০২৫ কালেকশনে রাখা হয়েছে ডিজিটাল-প্রিন্টেড টাই-ডাই, চার্জড ক্রোমা, সাররিয়েল জিওমেট্রি, পাওয়ার ফ্লাওয়ারের পাশাপাশি ক্ল্যাসিক ইক্কাত, আরজাইল, মান্দালা ও পোলকা ডটের মতো প্রিন্ট স্টোরি। পূজার বিভিন্ন পর্বকে মাথায় রেখে নানা বুননের শাড়ি যোগ হয়েছে সংগ্রহে। উৎসবের জন্য মানানসই মসলিন, কাতান ও হাফসিল্ক শাড়ি জুড়ে আছে এমব্রয়ডারি, প্যাচ ও কারচুপির কাজ। সকালের স্নিগ্ধ সময়ের জন্য থাকছে প্রিন্ট ও একরঙা সুতির শাড়ির সমাহার।
পূজায় কেন লাল-সাদা শাড়ি পরা হয়?
পূজার শাড়ি মানেই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। বিশেষ করে দশমীর দিন তাঁত, সিল্ক, সফট সিল্ক, জামদানি, মসলিন, খাদি সব ফেব্রিকের লাল-সাদা শাড়িই বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কেন লাল-সাদা শাড়িকে ঐতিহ্য ও বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ধরা হয়! বিশেষ করে পূজার সময় এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। শুভ্রতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও লাল-সাদা রঙের চল রয়েছে। সাদা রংকে পবিত্রতা ও নির্মলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লাল রং শক্তি, উর্বরতা ও শুভসূচনাকে নির্দেশ করে; যা উৎসব ও আনন্দের প্রতীক।
নানা রঙের মিশেলে
উৎসবে উজ্জ্বল রং না হলে ঠিক জমে না। সে জন্যে লাল-সাদা ছাড়াও শাড়িতে ম্যাজেন্টা, হালকা কমলা, গাঢ় কমলা, ফিরোজা, পিঙ্ক, চেরি পিঙ্ক, পাউডার পিঙ্ক, মেরুন, হোয়াইট, অফ-হোয়াইট, ব্রিক রেড, স্যালমন অরেঞ্জ, টেন ব্রাউন, মেরি গোল্ড, ল্যাভেন্ডার, নেভি, কোরা, কোরাল রেড, ক্রিমসন রেড, রয়্যাল ব্লু, বাটার ক্রিম, পেস্তা সবুজ, শ্যাওলা সবুজ ইত্যাদি রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অষ্টমীতে সবুজের বিভিন্ন শেড, প্যাস্টেল, ব্রিক রেড, টেন ব্রাউন রঙের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। এতে গরমে খানিকটা আরাম পাবেন। নবমী ও দশমীর দিনে নানা শেডের কমলা, কোরাল রেড, গাঢ় গোলাপি, রানী গোলাপি, লাল, মেরুন রঙের শাড়ি পরতে পারেন। ভিন্নতা আনতে সাদা, ক্রিম কিংবা আইভরি রঙের জামদানি, বাটার ক্রিম রঙের কাতান শাড়ি নির্বাচন করতে পারেন।
মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘পূজার উৎসবে ঐক্য ও সহযোগিতার চেতনাই লা রিভের পূজা কালেকশনের অনুপ্রেরণা। পূজার ঐতিহ্যবাহী লাল-সাদা রংকে প্রাধান্য দিয়ে এবার যোগ হয়েছে সম্প্রতি লঞ্চ হওয়া ফল-২৫ কালেকশনের দুটি সেন্টিমেন্ট কালার– আর্জেন্ট অরেঞ্জ ও গানাশ বা চকলেট ব্রাউন। এ ছাড়াও প্রাইমারি কালার প্যালেটে সাদা, কালো, সোনালি, পান্না সবুজ, গাঢ় নীল, ধূসর ও গোলাপির সংমিশ্রণ দেখা যাবে।’
শাড়ি পরুন ভিন্ন স্টাইলে
পূজার প্রতিটি দিন যদি শাড়ি পরতে চান, তাহলে পরার ধরনে ভিন্নতা আনতে পারেন। নয়তো একঘেয়ে লাগতে পারে। একদিন বাঙালি স্টাইলে অর্থাৎ কুচি ঠিকভাবে দিয়ে আঁচলটা কাঁধে পিনআপ করে নিতে পারেন। অন্যদিনগুলোয় বেছে নিতে পারেন ইন্দো-ওয়েস্টার্ন, নিভি, লেহেঙ্গা স্টাইল, বাটারফ্লাই কিংবা ধুতি স্টাইল। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্টাইলটি মূলত ফিউশন। এ স্টাইলে শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন জিন্স বা প্রিন্টেড প্যান্ট। একপাশে কুচি হবে। কোমরে একটা বেল্ট পরতে পারেন।
বাটারফ্লাই স্টাইলে শাড়ি পরলে আঁচল এমনভাবে থাকে, পেছন থেকে দেখতে প্রজাপতির ডানার মতো দেখায়। আঁচল কত লম্বা চান, তা আগে ঠিক করে নিন। এরপর পুরো শাড়ি বাম দিক থেকে ডান দিকে কুচি করতে করতে যেতে হবে। গুঁজে নিয়ে কুচিগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে।
শাড়িতে যারা একটু এক্সপেরিমেন্ট পছন্দ করেন, তারা ধুতি স্টাইলে শাড়ি পরতে পারেন। শাড়ির শেষ অংশটা একেবারে মাঝখানে গুঁজে নিন। আঁচল রেখে ধুতির মতো করে শাড়ি পরে নিন। তারপর আঁচল স্কার্ফের মতো গলায় জড়িয়ে নিন।
শাড়ি কোথায় পাবেন, দাম কেমন
পূজার শাড়ি কিনতে বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, আড়ং, নিপুণ, দেশাল, নাগরদোলা, সাতকাহন, হরীতকীতে ঢুঁ মারতে পারেন। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত স্কয়ার, শ্যামলী স্কয়ার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, হকার্স মার্কেট, মৌচাক মার্কেটসহ আপনার নিকটবর্তী যে কোনো মার্কেটে ঢুঁ মারতে পারেন। বিশ্বরঙ ও দেশীয় ব্র্যান্ড থেকে শাড়ি কেনা যাবে এক হাজার ৫০০ থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে। হকার্স মার্কেট থেকে আরও কমে শাড়ি কেনা যাবে।

