সুদীপ দেবনাথ রিমন: দুর্গা পূজা হলো বাঙালিদের অন্যতম প্রধান উৎসব। দেবী দুর্গার মহিষাসুরমর্দিনী রূপকে স্মরণ করে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা সাধারণত মহালয়া দিয়ে শুরু হয়। এই দিনেই দেবী দুর্গার পৃথিবীতে আগমনের সূচনা হয়। তবে মূল পূজা শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে। ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন, অধিবাস ও আমন্ত্রণ হয়। এরপরে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী – এই তিন দিন হলো মূল পূজার দিন। দশমীর দিন দেবীর বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শেষ হয়।
এই দিনকে বলা হয় বিজয়া দশমী। দেবীকে বিদায় জানিয়ে ভক্তরা মিষ্টি মুখ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে বিজয়া উদযাপন করা হয়। ২০২৫ সালের দুর্গাপূজার মূল দিনগুলো ও তিথি নিচে দেওয়া হলো: মহা শষ্ঠী ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার , মহাসপ্তমী: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রবিবার , মহা অষ্টমী: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার মহা নবমী: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার,
বিজয়া দশমী : ১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবারতিথি (পঞ্জিকা অনুযায়ী)তিথি (পঞ্জিকা অনুযায়ী)
তিথি (পঞ্জিকা অনুযায়ী) এই দিনগুলোর সকলেই আশ্বিন মাস (হিন্দু পঞ্জিকা), শুক্লা পক্ষ (পূর্ণিমার দিকে গণনা শুরু) তিথিতে পড়ে। দুর্গা পূজার প্রধান আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রতিদিনের পূজা-পার্বণ ধাপে ধাপে বিস্তারিত ও দুর্গা পূজার সূচনা। দুর্গা পূজা সাধারণত মহালয়া আমাবস্যা দিয়ে শুরু হয়। মহালয়ার দিন দেবী দুর্গাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় (“চক্ষুদান” বা প্রতিমায় চোখ আঁকার মাধ্যমে), আর এই দিন থেকেই দেবীর আগমনের শুভক্ষণ ধরা হয়। প্রতিদিনের আচার ও পূজা ষষ্ঠী (ষষ্ঠ তিথি) কালপরিষেবন ও আমন্ত্রণ – দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান করা হয়।প্রতিমায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবীর মুখোন্মোচন (চোখ খোলা প্রতিমায়)। সপ্তমী নবপত্রিকা প্রবেশ – কলাবউ বা নবপত্রিকা গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে শাখায় বেঁধে দেবীর পাশে স্থাপন করা হয়। মহাস্নান – মন্ত্রোচ্চারণ সহ দেবীর প্রতিমাকে স্নান করানো হয় (পানিতে নয়, আচারগত ভাবে)।
মূল পূজা শুরু হয় সপ্তমীর দিন থেকে।
অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে বিশেষ পূজা হয়, যেখানে ১০৮টি প্রদীপ ও ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয়।এই দিনকে সবচেয়ে শুভ ও শক্তিশালী বলে ধরা হয়।
অনেক জায়গায় কুমারী পূজা হয় (কুমারী মেয়েকে দেবীর রূপে পূজা করা হয়)। নবমীতে মহাপূজা – দেবীর বিস্তৃত পূজা হয়। ভোগ নিবেদন করা হয় (খিচুড়ি, লুচি, তরকারি, মিষ্টি ইত্যাদি)। সন্ধ্যায় আরতি, ধুনুচি নৃত্য ইত্যাদি হয়।
(বিজয়া দশমী) সিঁদুর খেলা – বিশেষ করে বিবাহিতা নারীরা দেবীর সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান। গঙ্গা বা জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।এর পর সবাই “শুভ বিজয়া” জানিয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে, মিষ্টান্ন খাওয়ানো হয়।
দেবী দুর্গা হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবী, যিনি শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। তিনি মহাশক্তি, মা, সৃষ্টিশক্তি এবং রক্ষাকারী শক্তির রূপ। দুর্গা মূলত অসুরনাশিনী রূপে পরিচিত—তিনি মহিষাসুর নামক অসুরকে বধ করেছিলেন, তাই তাঁকে মহিষাসুরমর্দিনী বলা হয়।
“দুর্গা” শব্দের অর্থ হলো “দুর্গম” বা অজেয়। যাকে জয় করা যায় না, তিনিই দুর্গা। দুর্গারূপ হচ্ছে তিনি দশভুজা, প্রতিটি হাতে ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র থাকে, যেমন ত্রিশূল, চক্র, তলোয়ার, ধনুক, গদা ইত্যাদি। দুর্গার বাহন হচ্ছে সিংহ – যা বীরত্ব ও শক্তির প্রতীক। দুর্গা দেবী যেমন করুণাময়ী মা, তেমনি ভয়ঙ্কর রূপে দুষ্ট শক্তির বিনাশকারিণী। পুরাণে দুর্গা দেবী দুর্গার উৎপত্তি বর্ণিত হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবী মহাত্ম্যমে। দেবতারা মহিষাসুর নামক অসুরকে দমন করতে না পেরে মহাশক্তিকে আহ্বান করেন। তখন তিনিই দেবী দুর্গা রূপে আবির্ভূত হয়ে অসুরসংহার করেন। দুর্গার রূপভেদ দেবী দুর্গার অনেক রূপ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: শৈলপুত্রী,ব্রহ্মচারিণী,চন্দ্রঘণ্টা, কূষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা,কাত্যায়নী,কালরাত্রী,মহাগৌরী সিদ্ধিদাত্রী, এই নয়টি রূপকে নবরূপা বা নবদুর্গা বলা হয়। পূজা ও গুরুত্ব দুর্গা পূজা প্রধানত বাংলায়, আসামে, বিহারে, ওড়িশায়, পশ্চিম ভারতসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়। আশ্বিন মাসে শারদীয়া দুর্গোৎসব সর্বাধিক জনপ্রিয়। দুর্গা মানবজাতিকে সেখানে যে ন্যায় অন্যায়ের উপর সর্বদা বিজয়ী হয়।