রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অনৈক্যের কারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রত্যেক দলই তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অটল। এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচর করার ব্যাপারে অবিচল সরকার।
‘কোনো উত্তাপই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “রাজনৈতিক দল থাকলে মতবিরোধ থাকবে, এক এক পার্টি এক এক কথা বলবে, এটাই নিয়ম, সারা বিশ্বে এমনই হয়। তবে, কোনো উত্তাপই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। গণভোটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবেন। সিদ্ধান্ত যাই হোক, ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই জাতীয় নির্বাচন হবে। কারণ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এটা ঠেকানোর কোনো শক্তিই নাই।”
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ‘মাইন্ড ব্রিজ অ্যান্ড নলেজ কম্পিটিশন’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সবাইকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করে শফিকুল আলম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দেশের মানুষের মঙ্গলে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং সব দলের জন্য মঙ্গল এমন সব কাজই করবেন। ইতোমধ্যে সরকার জুলাই সনদ ডিক্লার (ঘোষণা) করেছে, জুলাই সনদে স্বাক্ষর হয়েছে। এর আগে, অনেকগুলো কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, অর্থনীতিকে পুনরদ্ধার করা গেছে, ট্রায়ালের কাজগুলো হচ্ছে।”
‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই’
‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই’ বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮টি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডির এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব নিজ দলের এই অবস্থানের কথা জানান।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। সেখানে দুটা কারণ থাকবে, একটি ভোট গণভোটের জন্য, আরেকটি ভোট হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এই বিষয়ে কোন দ্বিমত কারো থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।”
‘ড. ইউনূস সংস্কার করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করেছেন’
উপদেষ্টারা অপদার্থ, তারা নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস সংস্কার করতে গিয়ে আরো সমস্যা সৃষ্টি করেছেন।”
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
মান্না বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ সইয়ের পর সংশোধনের অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি। গায়ের জোরে মূর্খের মতো সনদ সংশোধন করা হয়েছে। জুলাই সনদের প্রস্তাবনা থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি প্রতারণা। সনদ সইয়ের দিন ৫ নম্বর দফা পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার ঐকমত্য কমিশন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সনদে পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের কথা বলেছে। কিন্তু সনদ স্বাক্ষরের পর তা পরিবর্তন করার অধিকার তাদের কেউ দেয়নি।”
‘জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের কোনো বাস্তবতা নেই’
জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের কোনো বাস্তবতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর পল্লবী এলাকায় শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, “নির্বাচন-ডাকাতি স্থায়ীভাবে থামাতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। যারা জনগণের ভোটের মূল্যায়ন করতে চায় না, তারাই এখন গণভোট বানচাল করার চেষ্টা করছে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের কোনো বাস্তবতা নেই।”
দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তিনি একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তুলে ধরেন। মুজিবুর রহমান বলেন, “আগে বিচার-সংস্কার, তারপর জাতীয় নির্বাচন হবে।”