পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে পরিকল্পিতভাবে কারসাজির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কিছু কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রতিবেদন পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ছাড় পাচ্ছেন না কারসাজির সঙ্গে জড়িত আইসিবির কর্মকর্তারা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ৯৭২তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ পুঁজিবাজারের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এর মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, পুঁজিবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কারও ছাড় নেই—রাষ্ট্রীয় কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেই হোক না কেন, অন্যায় করলে তার জবাবদিহি করতেই হবে।
তাদের মতে, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আইসিবির কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাবশালী হিসেবে ভাবতেন এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময়কালেও তারা নানা অনিয়ম করে পার পেয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এর আগে কখনোই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে কারসাজির আগে আইসিবি থেকে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার বেচা হয়। পরে আবার সেই শেয়ারই টাকার বা কমিশনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এতে সরকারি টাকা খরচ করে নিজেরা টাকা আয় করেছেন।
জানা গেছে, আইসিবি ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ারগুলো উচ্চমূল্যে হিরুর কাছ থেকে কিনে নেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪৪ কোটি টাকার আর্থিক লোকসান হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনও সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং সুবিধাভোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিএসইসির এ পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই, সবার জন্য আইন সমভাবে প্রযোজ্য হোক। পুঁজিবাজারে লেভেল প্লোইং ফিল্ড তৈরি দরকার। আর সেই কাজটাই বিএসইসির নতুন কমিশন করার চেষ্ট করছে। আইন সবার জন্যই সমান হতে হবে। আমরা চাই এ বাজারে কেউ যেন বিশেষ সুবিধা না পায়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু আইসিবি সরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তাই কমিশন সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না। এজন্যই দুদক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বিস্তারিত অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিএসইসি এই কঠোর পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনিয়মের আগে বহুবার ভাবতে বাধ্য হবেন।”
গতকাল বিএসইসি থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনের কারসাজিতে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের জড়িত কর্মচারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, উক্ত শেয়ার লেনদেনের কারসাজিতে জড়িত থাকায় মো. আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো এবং সরকারি কর্মচারী হিসেবে আবুল খায়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।