নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। প্রথম পর্যায়ে স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন শুরু হবে। এর আগে সেপ্টেম্বর থেকে মক টেস্ট শুরু হবে। আর আগামী বছর থেকে নতুন এ প্ল্যাটফর্ম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করতে চায় সিএসই কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কেবল একটি পণ্য লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম নয়-এটি একটি অর্থনৈতিক রূপান্তরের সূচনা। দেশে এ প্ল্যাটফর্ম চালু হলে অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, বিনিয়োগ বৈচিত্র্য এবং বাজারের আধুনিকায়ন নিশ্চিত হবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে এটি বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৭ সালে উদ্যোগ নিলেও ২০২৪ সালের ২০ মার্চে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের চূড়ান্ত নিবন্ধন সনদ পায় সিএসই। এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় সিএসই। মন্ত্রণালয় থেকে পরে তা বিএসইসিতে পাঠানো হয়। আর ২০২০ সালে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়ে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ মে মাসে বিএসইসির ৯৫৬তম কমিশন সভায় ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (কমোডিটি ডেরিভেটিভস) প্রবিধানমালা-২০২৫’ অনুমোদনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
এদিকে, ২০২৩ সালে এক-চতুর্থাংশ শেয়ার কেনার মধ্যে দিয়ে সিএসইর কৌশলগত মালিকানায় এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। আর সিএসইর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)। প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতায় নিজস্ব প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করেছে সিএইসি।
জানা গেছে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচার সুযোগ থাকবে। তবে দৃশ্যমান পণ্য নয় বরং কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কেনাবেচা হবে। মূল পণ্যটি থাকবে কোনো গুদাম বা ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পণ্য হস্তান্তর হবে। তবে এখনই ওয়ারহাউজের মাধ্যমে পণ্য লেনদেন শুরু করবে না সিএসই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পুরোদমে চালু করতে এখনো সিএসইর কিছু কাজ বাকি আছে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু করা জন্য সার্বিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল দিয়ে এক্সচেঞ্জটির কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে নতুন পণ্য যুক্ত করা হবে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে লেনদেন করা জন্য পণ্যের পুরো অর্থ পরিশোধ করার প্রয়োজন হবে না। মোট দামের ১০ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য কিনতে পারবেন একজন ক্রেতা।ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর দাম বাড়লে কিংবা কমলে মুনাফা সংগ্রহ বা লোকসান বহন করতে হবে। তবে পরবর্তীতে ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে। সেই সঙ্গে পণ্য বাড়ানো হবে।
বর্তমান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আইন গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে সিএসই। গেজেট প্রকাশ হলে ব্রোকারদের অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে ট্রেকহোল্ডরদের জন্য আইন তৈরি করা আছে। সেটা বিএসইসিকে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। এরপর যারা সনদ নিতে চায় তাদের আবেদন সংগ্রহ করা হবে। পরে তা বিএসইসি থেকে অনুমোদনের পর ব্রোকারসহ পরীক্ষমূলক কার্যক্রম চালানো হবে। এর আগে সব ধরনের পরীক্ষামূলক ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে সিএসইর সব ধরনের প্রস্তুতি আগামী আগস্টে শেষ হবে। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে মক টেস্ট শুরু হবে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যে ইকো সিস্টেম দরকার সেটা তৈরি করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে মনে করে সিএসই কর্তৃপক্ষ।
সিএসইর ব্যবস্থপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, “প্রথম পর্যায়ে আমরা স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল দিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু করব। তবে এখনই ওয়ারহাউজের মাধ্যমে পণ্য লেনদেন শুরু করব না। এখন আমরা সব ধরনের ট্রেনিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে সিএসইর সব ধরনের প্রস্তুতি আগামী আগস্টে শেষ হবে। এরপর সেপ্টেম্বরে আমরা মক টেস্ট শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যে ইকো সিস্টেম দরকার সেটা তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও, ওই সময়ের মধ্যে আমরা সবার জন্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে পারব। বর্তমান কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গেজেট প্রকাশ হলেই কাজ আরো দ্রুত এগোবে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আর্থিক বাজারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ একটি নতুন প্রোডাক্ট বা প্ল্যাটফর্ম। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এছাড়া কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য সম্পর্কে সবাই ধারণা পাবেন। তখন কেউ পণ্যের মূল্য কম বা বেশি দেখিয়ে (আন্ডার বা ওভার ইনভয়েসিং করে) আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে, টাকা পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশে কমোডি এক্সচেঞ্জ চালু হতে যাচ্ছে, এটা অত্যন্ত সুখবর। এটাকে আমি স্বাগত জানাই। এটা আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটের জন্য নতুন প্রোডাক্ট বা অংশ। এটা একদিকে দেশে একটি নতুন ধরার সৃস্টি করতে যাচ্ছে। আরেক দিকে এ মার্কেট আমাদের এসেনসিয়াল কমোডিটির সাপ্লাই, অ্যাভেইলেবিলিটি এবং ট্রানজেকশন বা এক্সচেঞ্জকে সিস্টেমেটিক ভাবে আরো সহজ করে তুলবে। সর্বপরি কমোডি এক্সচেঞ্জের ইতিবাচক প্রভাব দেশের পুরো অর্থনীতিতে পড়বে বলে আশা করছি।”
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটা চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটা বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নে বিএসইসি সর্বাচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে বিএসইসি। বর্তমান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত আইনটি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বাকি কাজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে দ্রুত শেষ করতে হবে।”
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো অনেকটা স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ার কেনাবেচার বাজারের মতো। স্টক মার্কেটে বহু কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার বিক্রি করে এবং তা কিনে নেন বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারী। কমোডিটি এক্সচেঞ্জও তেমনই। তবে, এখানে শেয়ার নয়, পণ্য কেনাবেচা হয়। এই পণ্য কেনাবেচা সাধারণ পাইকারি বাজারের মতো নয়। বড় পাইকারি দোকানে (পাইকাররা যাকে মোকাম বলেন) ক্রেতা ও বিক্রেতা সরাসরি দর-কষাকষি করে পণ্য কেনাবেচা করেন। কিন্তু, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে ক্রেতা ও বিক্রেতার সরাসরি পণ্য কেনাবেচার সুযোগ নেই। অনেকটা শেয়ারের মতো বিক্রেতার দেওয়া পণ্যের সার্টিফিকেট (সনদ) বিক্রি হয়। মান সনদ দেখেই পণ্যের গুণগত মান বিষয়ে নিশ্চিত হন ক্রেতা এবং অন্য দেশে থেকেও শেয়ার কেনাবেচা করেন। শেয়ারবাজারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত ব্রোকারের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করতে হয়। থাকতে হয় নিজ বা প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট। একেবারে স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার কেনাবেচার মতো ব্যাপার। তবে, এই বাজারে পণ্য কিনে তা ডেলিভারি না নিয়ে ক্রয়কৃত সার্টিফিকেট অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হয়। অনেকটা মিলগেটে ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও কেনাবেচার মতো। এটি আইনি প্রক্রিয়ার বাজার, যা নিয়ম বা পদ্ধতি নির্ধারণ করে ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে কমোডিটিজ বা পণ্য এবং এ সশ্লিষ্ট বিনিয়োগ পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা করে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা ফিউচার মার্কেটের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ করা সহজ হয়।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কাঠামো
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কাঠামোর ক্ষেত্রে আইনে বলা হয়েছে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। এটি প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা হতে হবে। আর এর পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নিট সম্পদ হিসেবে রাখতে হবে। তবে পরিশোধিত মূলধনের শর্তাবলী সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর অধীনে ইতিমধ্যে নিবন্ধিত স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর জন্য এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে একজন কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) থাকতে হবে। যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিনিয়োগ করবে। এই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মোট পরিশোধিত মূলধনের সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সম্পর্কিত বা সংযুক্ত ব্যক্তি কোম্পানির কোনো শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। সিআইবি রিপোর্ট অনুসারে ব্যাংকের ঋণখেলাপি না হলে পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডাররা কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী ব্যতীত, কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে বা সংযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। কমিশন গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দ্বারা যে কোনো শ্রেণির ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে পণ্য লেনদেনের নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার ধারণ করার নির্দেশ দিতে পারবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কোনো পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী জালিয়াতি, বিশ্বাস ভঙ্গ, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত বা দেউলিয়া হতে পারবেন না। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদে মোট ১৩ জন সদস্য থাকবে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে, যার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে “এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩’ এর বিধানাবলি অনুসরণ করতে হবে। কমিশনের দ্বারা নির্ধারিত অন্য যেকোনো শর্ত পূরণ করতে হবে। লেনদেনের জন্য পণ্য অনুমোদনে ক্ষেত্রে বিএসইসির আইনে বলা হয়েছে, লেনদেনের জন্য কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোনো পণ্য বাজারে আনা যাবে না। এ বিষয়ে কমিশনের কাছে একটি চুক্তির অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। এসব শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে কমিশনের কাছে ১০ লাখ টাকার পেমেন্ট অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করতে হবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে প্রচলিত পণ্যের চুক্তিগুলোর জন্য ন্যায্য, কার্যকর ও স্বচ্ছ বাজার নিশ্চিত করবে। যে পর্যন্ত ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি চালু না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পণ্যের চুক্তি, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্টের জন্য ওয়্যারহাউজ, রেপোজিটরি সুবিধাসহ ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করবে। ব্যবসা ও কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিসমূহ সতর্কতার সাথে পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানটি জনস্বার্থে কাজ করবে এবং যেখানে পণ্য লেনদেন, ট্রেকহোল্ডার বা পণ্য ডেরিভেটিভ ব্রোকার, শেয়ারহোল্ডার, পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার স্বার্থের সাথে সংঘাত সৃষ্টি হয়, সেখানে বিনিয়োগকারী, গ্রাহক এবং সাধারণ জনসাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি
আইনে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে, বাজারে সুশাসন ও প্রশাসন নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু কমিটি গঠন করতে হবে। সেগুলো হলো-অডিট কমিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি, মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটি, পণ্য পরামর্শ কমিটি ও বাজার সচেতনতা কমিটি। তবে শর্ত থাকে যে, পণ্য বিনিময়ের কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কমিটিও গঠন করতে পারবে। এসব কমিটির কার্যপরিধি পণ্য বিনিময়ের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে।
অর্থনীতিতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ইতিবাচক প্রভাব
বিনিয়োগের নতুন প্ল্যাটফর্ম: শেয়ারবাজারের বাইরে একটি নতুন বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে করে বিনিয়োগের বৈচিত্র্য আসবে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।
মূল্য পূর্বাভাস ও বাজার স্থিতিশীলতা: ফিউচার কনট্রাক্ট বা ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ও উৎপাদকরা আগেই বাজার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এতে মূল্য অস্থিরতা কমবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।
পণ্য মান নিয়ন্ত্রণ ও গুদামজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন: কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রিত পণ্য লেনদেন হবে। এর ফলে দেশের ওয়্যারহাউজিং, কোল্ড স্টোরেজ ও লজিস্টিকস খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ আসবে এবং অবকাঠামো উন্নত হবে।
কৃষক ও উৎপাদকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ: কমোডিটি এক্সচেঞ্জ একটি স্বচ্ছ বাজারব্যবস্থা তৈরি করবে, যেখানে কৃষিপণ্যের দাম সরাসরি বাজারে নির্ধারিত হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং কৃষকরা তাদের উৎপাদনের প্রকৃত মূল্য পাবে।
কর ও রাজস্ব আদায়ে নতুন সুযোগ: সরকার এই লেনদেন থেকে ভ্যাট, শুল্ক ও অন্যান্য কর আহরণের সুযোগ পাবে, ফলে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি: বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক পণ্য লেনদেনের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বাড়বে, গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও কৃষিজগত আরো সক্রিয় হবে।
আমদানি-রপ্তানিতে সাশ্রয় ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: পণ্যদ্রব্যের গ্লোবাল দাম অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। রপ্তানিকারকেরা আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম নির্ধারণ করতে পারবে, ফলে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতাশক্তি বাড়বে।
তথ্যভিত্তিক বাজার বিশ্লেষণ সহজ করা: কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম, লেনদেনের পরিমাণ ও চাহিদা-জোগানের তথ্য জমা হবে। এই বিগ ডেটা ব্যবহার করে নীতিনির্ধারকরা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।