টানা চার দিনের ছুটি: পর্যটনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

ডেস্ক রিপোর্ট:

সময়: শুক্রবার, অক্টোবর ৩, ২০২৫ ৯:৩০:৪১ পূর্বাহ্ণ

দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটিতে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট ও গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের যেন ঢল নেমেছে। কোথাও আগাম বুকিং ছাড়া মিলছে না হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ। সমুদ্র, পাহাড় কিংবা সবুজ প্রকৃতির টানে মানুষ ছুটে গেছে শহর ছাড়িয়ে নিরিবিলি গন্তব্যে।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ছুটিতে পর্যটকদের যে সাড়া মিলেছে, তা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই টানা চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কক্ষ পেতে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

মেরিন ড্রাইভ ঘিরে হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী, প্যাঁচার দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল পর্যটকের ভিড়।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, টানা ছুটির কারণে শহরের প্রায় সব হোটেলই পূর্ণ।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি ছিল। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, সৈকতে ৭৫ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বাড়তি চাপ সামাল দিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস’ নামে একজোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করেছে।

কুয়াকাটা : বৃষ্টি উপেক্ষা করেও লাখো পর্যটক : উত্তাল সমুদ্র, ভারি বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যেও কুয়াকাটা সৈকতে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। গঙ্গামতী থেকে লেমপুর বন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ।

তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের সব কক্ষ ছিল বুকিং। অনেকে আশপাশের মহিপুর ও আলীপুরে গিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে।

খুলনা থেকে আসা পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘লাল কাঁকড়া, ঝাউবন, মন্দির—সবকিছু মিলিয়ে কুয়াকাটা অসাধারণ।’

হোটেল-মোটেল ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল মোতালেব শরীফ জানান, শীত মৌসুমে আরো বেশি পর্যটক আসবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করছেন।

সিলেট : ভোগান্তি সত্ত্বেও আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ীরা : দীর্ঘ ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের আগমন বাড়লেও যাতায়াতব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল এবং ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা।

সাদাপাথর, ভোলাগঞ্জ, লালাখালসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভোলাগঞ্জ পর্যটন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সফাত উল্লাহ জানান, সাদাপাথরকাণ্ডে পর্যটন কমে গেলেও এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সিলেটের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘আবহাওয়া বৈরী হলেও আমরা আশাবাদী।’

গাজীপুর : বুকিং ছাড়া রিসোর্টে জায়গা মিলছে না : ঢাকার পাশেই নিরিবিলি পরিবেশ আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে গাজীপুরের রিসোর্টগুলো ছিল ছুটির দিনে পূর্ণ।

সারা রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি, অরণ্যবাস, রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্টসহ শতাধিক রিসোর্টে রুম খালি নেই।

সারা রিসোর্টের রিজার্ভেশন এক্সিকিউটিভ লাবিব হাসান জানান, তাঁদের কাপল রুমের ভাড়া ১৮ হাজার টাকা, যার সঙ্গে রয়েছে নানা সুবিধা।

রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টের ম্যানেজার আহাম্মদ হোসেন বলেন, আগাম বুকিং ছাড়া কেউ রুম পাচ্ছেন না। অনেকে ফিরে গেছেন।

টানা ছুটিতে উপচে পড়া পর্যটকের ভিড় দেশের পর্যটনশিল্পের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। তবে যাতায়াতব্যবস্থা উন্নত করা না গেলে তা অনেকের ভ্রমণ দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠছে—এমন মত দিয়েছেন পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Print This Post
নিউজটি ৬৩ বার পড়া হয়েছে ।