মুদ্রানীতি ঘোষণা: অপরিবর্তিত নীতি সুদহার-ঋণ প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সময়: বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩১, ২০২৫ ৬:৩২:৩১ অপরাহ্ণ

চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই–ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বেসরকা‌রি ঋণ প্রবৃ‌দ্ধি ও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকার আমলের এবং বর্তমান গভর্নরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি। অনুষ্ঠানে চার ডেপুটি গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও অন্যান্য কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুইবার (‘জানুয়ারি-জুন’ ও ‘জুলাই-ডিসেম্বর’ সময়ের জন্য) মুদ্রানীতি নীতি ঘোষণা করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, চলতি অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রবৃ‌দ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা মে মাসে ছিল ৯.০৫ শতাংশ। গত ডি‌সেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব‌্যাংক চাচ্ছে আগামী ডি‌সেম্ব‌রের ম‌ধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে না‌মিয়ে আনতে।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, মূল্যস্ফীতি কম‌তির দি‌কে আছে, আমরা চা‌চ্ছি এটা আরও কমাতে; ৭ শতাং‌শে নামলে নী‌তি সুদহার কমানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রধান নীতি সুদহার রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। মূলত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে রেপোর বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। অন্যদিকে, নতুন মুদ্রানীতিতে আন্তঃব্যাংক ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। অবশ্য গত ১৫ জুলাই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকা রাখার ক্ষেত্রে এ সুদহার প্রযোজ্য হয়।

নী‌তিগুলোর তথ‌্য তুলে ধ‌রে গভর্নর জা‌নিয়েছেন আপাতত এসব নী‌তি প‌রিবর্তন হ‌বে না। তি‌নি জানান, এখন প্রবৃ‌দ্ধির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। বি‌শেষ সহায়তায় প্রবৃ‌দ্ধি দেখাতে চা‌চ্ছি না। গতবছর ৪ শতাংশ প্রবৃ‌দ্ধি হয়েছে আগামীতে ৫ দশ‌মিক ৫ শতাংশ লক্ষ‌্য ঠিক করা হ‌য়েছে, এটা অর্জনে চেষ্টা করবো।

বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আগের মুদ্রানীতিতে বেশি থাকলেও তা পূরণ হয়নি। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হচ্ছে না। গত ‌জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ দশ‌মিক ২০ শতাংশ নেওয়ার লক্ষ‌্য ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশ লক্ষ‌্য ঠিক করেছে।

একইভাবে সরকারি খাতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঋণ কিছুটা কম হয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে এই খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ২০ দশ‌মিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরে সরকারি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ ধরা হলেও গত জুন পর্যন্ত অর্জিত হয় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করছে।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের বাইরের উৎস হিসেবে সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার কোটি এবং ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা।

Print This Post
নিউজটি ১০৮ বার পড়া হয়েছে ।