ভোজ্যতেলে লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে ঘোষণা ছাড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫ ১০:০০:৪১ পূর্বাহ্ণ

ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে এক ঝটকায় ৯ টাকা। এতে সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। ভোক্তা অধিকার–সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়া এভাবে কৌশলে দাম বাড়ানো একেবারেই অনৈতিক। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত বিষয়টি তদন্ত করা।

এ ঘটনায় একে অপরের বিপরীত বক্তব্য দিয়েছে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় সরকারকে অবহিত করে তারা দাম সমন্বয় করেছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়নি।

গতকাল রাজধানীর কাঁঠালবাগান, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়—রূপচাঁদা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন মূল্য অনুযায়ী বাজারে আসা পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫ টাকায়। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিনের নতুন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৮ টাকা, যেখানে এতদিন প্রতি লিটার ১৮৯ টাকায় বিক্রি হতো। তবে এক ও দুই লিটারের নতুন দামের বোতল এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনে বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রনি তালুকদার। কত দাম নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে নতুন বাড়তি দরের তেল আসছে। কয়েকটি দোকান ঘুরে পরিচিত দোকানদারের কাছ থেকে আগের দরে, অর্থাৎ ৯২০ টাকায় নিয়েছেন। বোতলের গায়ে দাম লেখা ছিল ৯২২ টাকা। ওই মার্কেটে কয়েকটি দোকানে নতুন ৯৬৫ টাকা দরের তেল দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ‘আব্দুর রব স্টোর’-এর স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম জানান, এক সপ্তাহ আগে কোম্পানিগুলো জানিয়েছিল যে বাজারে নতুন দামের তেল আসবে। গত দুই দিন ধরে তারা বাড়তি দামের তেল সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের জন্য কোম্পানিগুলো ১০ নভেম্বর চিঠি দেয় এবং জানায়, নতুন দাম ২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। সমিতি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৯ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম ১৭৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম রাখা হয়েছে ১৬৯ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬ অনুসারে, ২০১১ সালে একটি আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা অত্যাবশ্যাকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ হিসেবে পরিচিত। এ আদেশে বলা আছে– উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিকভাবে হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনর্নির্ধারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে করবেন। তবে ১৫ দিন আগে তা মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ আদেশ অনুসারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।

তবে সরকারের অনুমোদন ছাড়া এভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া ‘স্পষ্টতই অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খতিয়ে দেখা উচিত।

Print This Post
নিউজটি ৯ বার পড়া হয়েছে ।